×
history
history

পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার বাগমুন্ডি, আড়ষা, ঝালদা -১ ও ২, বলরামপুর, বান্দোয়ান, বরাবাজার অঞ্চলে বসবাসকারী আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ছৌ নাচের প্রচলন আছে। ছৌ মুখোশ শিল্পীরা থাকেন পুরুলিয়া জেলার চড়িদা গ্রামে।

ছৌ নৃত্য ছোটনাগপুর মালভূমিতে বসবাসকারী আদিবাসী মানুষদের নিজস্ব নৃত্যধারা। পুরুলিয়া ছৌ ছাড়া আরো দুই ধরণের ছৌ রয়েছে – ঝাড়খণ্ডের সেরাইকেল্লা ছৌ এবং ওড়িশার ময়ুরভঞ্জ ছৌ।

ছৌ আঞ্চলিক মানুষের ধর্মবিশ্বাস ও লোকাচার উদযাপনের সাথে অঙ্গাঙ্গী ভাবে সম্পৃক্ত। পুরুলিয়া জেলায় এপ্রিল ও মে মাসে আঞ্চলিক বিভিন্ন শিবমন্দির সংলগ্ন এলাকায় যে চৈত পরব অনুষ্ঠিত হয়, তার সঙ্গে রয়েছে ছৌ-এর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। প্রাথমিক ভাবে একজনই নর্তক থাকতেন এবং মুখোশ থাকতো না। পুরুলিয়া ছৌ এর এই আদি রূপকে বলা হয় ‘একৈরা ছৌ’। পুরুলিয়া ছৌ-তে এসেছে আঞ্চলিক বিভিন্ন নৃত্যকেন্দ্রিক লোকায়ত উদযাপনের ছোঁয়া – যার মধ্যে মূল একটি হল গাজন। ছৌ নাচে শিল্পীরা যে কাহিনী গুলি বর্ণনা করেন সেগুলির উপাদান সংগ্রহ করা হয় রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ ইত্যাদি থেকে। নাচার সময় নাচে শিল্পীরা পরে নেন নানান আভরণে অলঙ্কৃত পোশাক এবং মুখে পরে নেন বিশদে ও নিপুণভাবে তৈরি করা মুখোশ। কোন শিল্পী কোন চরিত্রের ভূমিকায় রয়েছেন তা সেই পোশাক এবং মুখোশের মাধ্যমেই দর্শকদের কাছে সুস্পষ্ট করা হয়।

মুখোশগুলি তৈরি করেন চড়িদা গ্রামের শিল্পীরা। সাধারণত এঁরা দেবদেবীর মুখ বা পুরাণ-মহাকাব্যের চরিত্রের মুখের আদলে মুখোশ বানান। কখনো বা মুখোশ নির্মিত হয় আদিবাসী পুরাকথার কোনো চরিত্রের মুখাবয়বের আদলে। ছোটো বড়ো নানান আকৃতির মুখোশ তৈরি হয়। প্রায় ১৫০ বছর আগে, বাঘমুণ্ডির তৎকালীন রাজা মদন মোহন সিং দেও-র রাজত্বকাল থেকে, চড়িদায় ছৌ মুখোশ বানানোর শিল্প আরম্ভ হয়। ‘সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে’।

Bengali text