×

নারীর অশ্রুজলে ভগবানের পরাজয়

দেবতা মহাদেব ও দেবী পার্বতী শুম্ভ এবং নিশুম্ভ নামে দুই ভয়ঙ্কর দৈত্যকে নিধন করতে গিয়েছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফেরার সময় মহাদেবকে পার্বতী জানালেন, এই দুই দৈত্যকে বধ করতে তিনি আটবার নিজের রূপ পরিবর্তন করেছিলেন। একথা শুনে কার্তিকেয় বললেন, এই কালপর্বে দেবীকে স্মরণ করবে মানুষ, পূজিত হবেন তিনি। মাসটির নাম কার্তিক রেখে তাকে পুরস্কৃত করলেন দেবতা মহাদেব এবং দেবী পার্বতী। মাসটি পরিণত হল উৎসবের মাসে।

এই ঘোষণার পর কৈলাসে শুরু হল উৎসব। কৈলাসে পৌঁছনোর পর তারা মর্ত্যলোক (পৃথিবী, জীবিতদের স্থান) থেকে এক মহিলার কান্না শুনতে পেলেন। সে দেবতা শিব ও দেবী পার্বতীর ভক্ত। ইন্দ্রদেব বললেন, মহিলাদের কোন ক্ষমতা নেই এবং তারা পুরুষদের অধীনে থাকে, মেয়েদের চোখের জল পুরুষদের দুর্বল করে দেয়।

দেবতা শিবের নির্দেশে সব দেবদেবীরা ছদ্মবেশে ক্রন্দনরত মহিলাকে পরীক্ষা করতে গেলেন। সেখানে গিয়ে তারা জানলেন, তার স্বামী মারা গেছে। স্বামীর প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য সে দেবতা মহাদেব ও দেবী পার্বতীর কাছে প্রার্থনা করছেন। তখন পার্বতী তাকে একটা শর্ত দিলেন, যদি সে মাটির পাত্রে সমুদ্রের জল আনতে পারে তবে তার স্বামী বেঁচে উঠবে। মহিলাটি তখনই বেরিয়ে পড়লো। কিন্তু সেসময়  মাটির পাত্র কীভাবে তৈরি করতে হয় তা কেউ জানতো না। দেবতা মহাদেব সৃষ্টি করলেন কুম্ভকারদের। তাদের কাছ থেকে মৃৎপাত্র নিয়ে মহিলাটি জল আনতে গেল সমুদ্রে। ক্রূদ্ধ ইন্দ্রদেব বজ্রপাত করে সমুদ্রের সব জল শুষে নিলেন। মহিলা অঝোরধারে কাঁদতে লাগলেন। মাতা পার্বতী তার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারলেন না, হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হল। মৃৎপাত্র ভরে উঠলো বৃষ্টির জলে এবং তার স্বামী সেই জলে বেঁচে উঠলো। তার নাম ছিল কারুয়া। এমন নানা পরীক্ষার পর মহাদেব ইন্দ্রকে বললেন, এই মহিলা মোটেই পুরুষকে চোখের জলে দুর্বল করেনি। মহাদেব তার স্বামীর শ্রাদ্ধের দিনটিকে মহিলাদের ত্যাগের দিন হিসেবে চিহ্নিত করলেন। সেদিন থেকেই শুরু হল ‘কারুয়া চৈত ব্রত’।

সারকথা

শুম্ভ ও নিশুম্ভকে বধ করার পর দেবী পার্বতী, দেবতা মহাদেব ও অন্যান্য দেবদেবীরা কৈলাসে ফিরছিলেন। হঠাৎ তারা শুনলেন, পৃথিবীতে এক মহিলা তার স্বামীর শোকে কাঁদছেন। বিধবা মহিলা তার স্বামীর জীবন ফেরৎ চাইলেন দেবতাদের কাছে। দেবতাদের দেওয়া নানা পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে গিয়ে তিনি স্বামীর প্রাণ ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হলেন।